২৪খবর বিডি : ' ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একের পর এক দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো সফর করছেন। গত মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কায় পাঁচ দিনের সফরে যান তিনি। জয়শঙ্কর ২৬ থেকে ২৭ মার্চ মালদ্বীপ এবং ২৮ থেকে ৩০ মার্চ শ্রীলঙ্কা সফর করেন।'
* মালদ্বীপ সফরে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বন্ধুত্ব জোরদার করা নিয়ে আলোচনা করেন। জয়শঙ্কর এমন এক সময়ে মালদ্বীপ সফর করেন যখন মালদ্বীপের বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদরা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিমের সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করছে এই বলে যে তারা মালদ্বীপকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে গত দু’বছর ধরেই ‘ইন্ডিয়া আউট’ এর মতো ভাষাও ব্যবহার করছেন তারা।
' মালদ্বীপ থেকে দ্বিপাক্ষিক সফর এবং বিমসটেক (বঙ্গোপসাগরীয় বহুমাত্রিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জোট) বৈঠকের জন্য ২৮ মার্চ শ্রীলঙ্কা পৌঁছেন জয়শঙ্কর। তিনি শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য এমন এক সময়কে বেছে নেন যখন দীর্ঘদিন ধরে চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকা দেশটির আপামর জনসাধারণ সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নেমেছে। বলাবাহুল্য, শ্রীলঙ্কার এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই চীনা 'ঋণের ফাঁদ' এবং এক পরিবারের শাসনকে দায়ী করছেন। ভারত এরই মাঝে দফায় দফায় শ্রীলঙ্কার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।'
এদিকে, আজই ঢাকায় এসেছেন জয়শঙ্কর। তার সাথে ভারতের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রাও আসবেন বলে জানা গেছে।
* ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করবেন।
* মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাবেন কি না, তা তিনিই ঠিক করবেন। তবে আমরা কখনোই আমন্ত্রণকে না বলি না।" পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এমন কথা বললেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অনেক আগেই ঠিক হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। জুলাই মাসে এ সফর হতে পারে বলে ভারতের অনেক পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। ' পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফরের অন্যতম অ্যাজেন্ডা ছিল প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা। সে সময় পররাষ্ট্রসচিব নিজেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।'
* ওদিকে, জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরে ঢাকার জন্য 'সুসংবাদ' নিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তবে ওই খবরটি কী সেটা জানেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, "জয়শঙ্কর কিছু ভালো সংবাদ নিয়ে আসতে পারেন...তিনি আমাদের সারপ্রাইজ দেবেন।"
* ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, তিনদিনের বাংলাদেশ এবং ভুটান সফরে
জয়শঙ্কর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত বিনিময় করবেন। এনডিটিভি জানিয়েছে, জয়শঙ্করের বাংলাদেশ সফরের লক্ষ্য শেখ হাসিনার ভারত সফরের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী , কী তার লক্ষ্য?
* অন্যদিকে, বাংলাদেশ হয়ে শুক্রবার ভুটান যাবেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর (২০২০ সালের মার্চ মাসের পর) জয়শঙ্করই হবেন প্রথম কোন উচ্চ পর্যায়ের বিদেশি অতিথি যিনি ভুটান সফর করছেন। ভুটান সফরে তিনি দেশটির রাজা, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।
* করোনা মহামারীর দাপট কিছুটা স্তিমিত হওয়ার সাথে সাথেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিবেশী দেশগুলোতে 'ঝটিকা' সফর ঘিরে ব্যাপক কৌতুহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সচেতন মহলে। যদিও জয়শঙ্করের এসব সফরকে ভারতের 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতির অংশ হিসেবে বর্ণনা করছে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম, কিন্তু অনেকেই বিষয়টিকে এতো সহজভাবে দেখতে নারাজ। তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ভারত তার প্রায় একক আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হলেও, এ অঞ্চলে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে দেশটি।
এছাড়া, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন যার যার আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। এ অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত চার দেশের জোট 'কোয়াড' এর অন্যতম সদস্য ভারত৷ অনেকেই কোয়াডকে চীনবিরোধী জোট হিসেবে মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্র কোয়াডের মাধ্যমে এশিয়ায় নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চায় বলেই তাদের ধারণা। বেইজিংও অনেকবার বলেছে, চীনের আধিপত্য ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র কোয়াড গঠন করেছে।
' সবমিলিয়ে কোয়াড সদস্য ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উত্থান বা আধিপত্য ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অনেকের ধারণা। তাদের এমন ধারণার পেছনে কারণও রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলো সফরের মাঝেই এস জয়শঙ্কর চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন সফর করেন। ওই সফরে তার সাথে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও ছিলেন। সফরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সাথে বৈঠক করেন। দুই দেশের চার মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি তখন বলেছিলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধি এর অন্যতম লক্ষ্য।'